স্বরাষ্ট্র
•  জঙ্গলমহল এবং দার্জিলিং-এর পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করছে। ২০১৩-১৪য় দু জায়গাতেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

•   জঙ্গলমহলে হিংসা এখন অতীত। জঙ্গলমহলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যপরিষেবা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষার বিকাশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী রাজ্য প্রশাসন।

•   সমাজকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে প্রত্যেক আদিবাসী পরিবারকে ২ টাকা কিলো দরে চাল এবং বিপুল সংখ্যক আদিবাসী বালিকাদের সাইকেল বিতরণ উল্লেখযোগ্য। পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং ঝাড়গ্রাম পুলিশ ডিসট্রিক্টে ২০১৩-য় আয়োজন করা হয়েছিল ‘জঙ্গলমহল কাপ-২০১৩’। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১৭০৮টি ফুটবল দল, ৪২টি কবাডি দল, ৩৩১৬টি তীরদাজ দল এবং ৯২৬টি ছৌ-শিল্পী অংশগ্রহণ করেন।

•   সরকারি নীতিতে সাড়া দিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জন বামচরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছেন। এদের মধ্যে ৩২ জনকে ইতিমধ্যেই হোমগার্ড নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রায় ১০,০০০ স্থানীয় যুবক-যুবতীকে জুনিয়র কনস্টেবল, ন্যাশনাল ভল্যান্টারি ফোর্স অথবা হোমগার্ড হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে এবং এদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

•   রাজ্যপুলিশ বাহিনীর আধুনিকীকরণকে এই সরকার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছে। রাজ্য পুলিশকে আরও শক্তিশালী করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং নতুন যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। ২০১৩-১৪-য় ১৩, ৮৭, ৬৬, ৭২৪ টাকা নিম্নলিখিত যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে।

•   ১) পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ – ১১১টি গাড়ি (এর মধ্যে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স এবং ট্রুপ কেরিয়ার ভ্যান) এবং ৫৮টি মোটর সাইকেল।

•   ২. কলকাতা পুলিশ – ৭২টি গাড়ি এবং ১০০টি মোটর সাইকেল

•   ২০১৩-১৪-য় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সামগ্রীর জন্য ৫.২৫ কোটি টাকা এবং কলকাতা পুলিশের সামগ্রীর জন্য ২.৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

•   কর্মীর সংখ্যা কম থাকার সমস্যা দূর করতে ৪০,০০০ স্থায়ী এবং ১,৩০,০০০ সিভিক পুলিশ ভল্যান্টিয়ারের শূণ্য পদ (২০১৩-য় অনুমোদিত) পূরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১, ১৯, ৯১৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই আর্থিক বর্ষের মধ্যে বাকিদের নামও তালিকাভুক্ত করা হবে।

•   জঙ্গলমহল এলাকায় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হিসাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বামচরমপন্থী সংগঠন অধ্যুষিত তিন জেলায় ৫০০০ জুনিয়র কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। বীরভূমে আরও ৫০০ জনকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। বামচরমপন্থী সংগঠন অধ্যুষিত জেলাগুলিতে তপশিলি জনজাতিভুক্ত ৭০০ জন(মহিলা সহ)কে নিয়োগ করা হয়েছে। ৪০২৭জন এনভিএফ এবং ১১৮৩জন গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে।

•   ২০১৩-১৪-য় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ৭টি নতুন পুলিশ স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এগুলি হল উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যমগ্রাম, দত্তপুকুর এবং শাসন; হাওড়ার পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় চ্যাটার্জি হাট এবং এজেসি বোস বোটানিক গার্ডেন পুলিশ স্টেশন; মালদায় পুকুরিয়া পুলিশ স্টেশন এবং বর্ধমানে নাধানঘাট পুলিশ স্টেশন। প্রতিটি পুলিশ স্টেশনই চালু হয়ে গেছে।

•   এছাড়াও ২০১৩-১৪-য় বীরভূমের বক্রেশর ধামে এবং হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় বেলুড় মঠে ২টি আউটপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।

•   কলকাতা পুলিশের আওতায় প্রস্তাবিত ৮টি নতুন পুলিশ স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। সম্প্রসারিত এলাকায় এই পুলিশ স্টেশনগুলি হল – সরশুনা পি.এস (ঠাকুরপুকুর পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), আনন্দপুর পি.এস (তিলজলা পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), পঞ্চসায়র পি.এস (পূর্ব যাদবপুর পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), সাউথ বেহালা পি.এস (বেহালা পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), বড়িশা পি.এস (হরিদেবপুর পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), গল্‌ফগ্রিন পি.এস (যাদবপুর পি.এস দ্বিখন্ডিত করে), বাঘাযতীন পি.এস (পাটুলি পি.এস দ্বিখন্ডিত করে) এবং রাজডাঙ্গা পি.এস (কসবা পি.এস দ্বিখন্ডিত করে)।

•   নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রতিহত করতে পর্যায়ক্রমে ৬৫টি মহিলা পুলিশ স্টেশন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের সরকার। ২০১১-১২-য় ১০টি মহিলা পুলিশ স্টেশন স্থাপিত হয়েছিল। ২০১৩-১৪-য় আরও ১০টি মহিলা পুলিশ স্টেশন চালু করা হয়েছে। এগুলি হল- সিউড়ি, বর্ধমান, শ্রীরামপুর, ইংরেজবাজার, ডায়মন্ড হারবার, দার্জিলিং, ব্যারাকপুর, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া।

•   খুব শীঘ্রই পরবর্তী দুটি পর্যায়ে ২০টি (বাকি ৪৫টির মধ্যে) মহিলা পুলিশ স্টেশন প্রস্তাবিত হয়েছে।

•   যেখানে ২০০৮-২০১১- এই তিন বছরে বিগত সরকারের আমলে মাত্র ৩টি পুলিশ স্টেশন তৈরি হয়েছিল সেখানে গত তিন বছরে (২০১১-২০১৪) বর্তমান সরকার ৪৮টি নতুন পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

•   ২০১৩-য় ইন্ডিয়ান পেনাল কোড অনুযায়ী (আইপিসি) কারাদন্ডের হার গত বছরের তুলনায় ৫৮.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অধিক্ষেত্রর আওতায় ২০১৩-য় মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনার নথিভুক্তকরণ ৩.১% হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১২-য় মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ২৪,৫৯০টি নথিভুক্তকরণ হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-য় ২৩,৮১৮টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ২০১২-র তুলনায় ২০১৩ সালে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ যেমন ডাকাতি, রবারি, বার্গলারি এবং চুরির পরিমাণও ৩.৫% হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৩-য় ডাকাতি এবং রবারির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১২-য় ১০৪৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-য় মাত্র ৭৬৩টি ডাকাতি এবং রবারির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। সুতরাং ২০১৩-য় এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের ঘটনা ২৭% হ্রাস পেয়েছে।

•   মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ জুরিসডিকশনের সাফল্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সেই সাফল্য ব্যখ্যা করা হল :

•   ২০১২-য় নথিভুক্ত ঘটনা

•   ধর্ষণ : ১৯৭৮, পণের কারণে মৃত্যু : ৫৭৪, যোনি নিগ্রহ : ১৭৯, স্বামী এবং তাঁর সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত : ১৯০০০ (মোট : ২১৭৩১)

•   ২০১৩-য় নথিভুক্ত ঘটনা

•   ধর্ষণ : ১৬৪৪, পণের কারণে মৃত্যু : ৪৬৮, যোনি নিগ্রহ : ১৬৫, স্বামী এবং তাঁর সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত : ১৭৩২২ (মোট : ১৯৫৯৯)

•   ২০১২-র তুলনায় হ্রাসের শতাংশ

•   ধর্ষণ : -১৬.৯%, পণের কারণে মৃত্যু : -১৮.৫%, যোনি নিগ্রহ : -৭.৮%, স্বামী এবং তাঁর সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত : -৮.৮% (মোট : -৯.৮%)

•   নারী ও শিশু পাচার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ২০১৩ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ২০১২-য় নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা ৭৪০, ২০১৩-য় তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৯৭। ২০১৩-য় এই অপরাধে অভিযুক্ত ৩০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অপরাধের শিকার এমন ২১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

•   বর্তমান সরকার হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, ব্যারাকপুর, বিধাননগর এবং শিলিগুড়িতে ৫টি পুলিশ কমিশনারেট স্থাপন এবং চালু করেছে। এর ফলে আরও উন্নততরভাবে পাচার সহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে, বিভিন্ন আইনগত সমস্যায় সঠিক সময়ে নাগরিকরা পুলিশি সহায়তা পাচ্ছে, পুলিশ এবং জনগণের সম্পর্ক উন্নততর হয়েছে এবং সিটি পুলিশের পেট্রোলিং সিস্টেম আরও ভালভাবে কাজ করছে।

•   ৮টি সিবিআই আদালত এবং ৪৬টি মহিলাদের জন্য আদালত ছাড়াও ১৯টি জেলায় ১৯টি মানবাধিকার আদালত স্থাপন করা হয়েছে। ৮৮টি ফার্স্ট ট্র্যাক আদালতও চালু রয়েছে। উল্লেখ্য, ১.৪.২০১১ থেকে ফার্স্ট ট্র্যাক আদালত চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ রয়েছে, তা সত্ত্বেও রাজ্য তহবিলের মাধ্যমে ফার্স্ট ট্র্যাক আদালতগুলি চালু রয়েছে।

•   ধর্ষণের মামলায় দ্রুত কারাদন্ডের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল :

•   ক. মালদার বামনগোলায় ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্তকরণের ২৪ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের কারাদন্ড হয়েছে।

•   খ. দক্ষিণ দিনাজপুরের ৪টি ঘটনার মধ্যে ২টি ঘটনায় অপরাধ নথিভুক্তকরণের ৯ মাসের মধ্যে, ১টি ঘটনার ১ বছরের মধ্যে এবং আরেকটি ঘটনার ১ বছর ৬ মাসের মধ্যে অভিযুক্তরা ধরা পড়েছে।

•   গ. উত্তর দিনাজপুরের ২টি মামলার নথিভুক্তকরণের ১ বছরের মধ্যে অভিযুক্তদের কারাদন্ড হয়েছে। মামলার দ্রুত নিস্পত্তির উদ্দেশে রাজ্য পুলিশ বিবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৩-১৪-য় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জুরিসডিকশনের আওতায় ৫১৭৮টি মামলা লোক আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট জরিমানা হয়েছে ১৩.৫৮ লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্লিয়া-বার্গেনিং কোর্সের মাধ্যমে ১৬৪টি মামলার (আগের বছর এর সংখ্যা ছিল ৬৬টি) নিস্পত্তি হয়েছে কারাদন্ড এবং ৮৫,৬০০ টাকা ফাইন ধার্য করার মাধ্যমে।

•   উপকূল নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ, মইপিঠ এবং সুন্দরবন, উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর, পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা মোহনা এবং তালপাতি ঘাটে মোট ৬টি উপকূলীয় পুলিশ স্টেশন গঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে উপকূল সুরক্ষা যোজনার আওতায় পূর্ব মেদিনীপুরের জুনপুট, মন্দারমণি এবং নয়াচরে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার, হারউড পয়েন্ট, গঙ্গাসাগর, গোবর্ধনপুর এবং ঝড়খালিতে মোট ৮টি নতুন উপকূলীয় পুলিশ স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ২০১৩-১৪-এ উপকূল সুরক্ষার জন্য চুক্তির ভিত্তিতে ৪৭ জন টেকনিকাল স্টাফের পদ অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি শূন্য পদও দ্রুত পূর্ণ করা হবে।

•   মইপিঠ এবং তালপাতি ঘাটের উপকূলীয় পুলিশ স্টেশন ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে।

•   ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের আদলে স্পেশালাইজড মেরিন পুলিস ব্যাটেলিয়ন তৈরির প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।

•   বে-আইনি অস্ত্র এবং বে-আইনি মদ উদ্ধারে রাজ্যপুলিশ অতিসক্রিয় রয়েছে। ২০১৩-র এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬২০টি বে-আইনি অস্ত্র, ১০,৩৪৫ রাউন্ড গুলি, ১৯,৩১৩টি বোমা, ১২৯টি ডিটোনেটর এবং ৬৯২টি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করা হয়েছে।

•   ২০১৩-১৪-য় কলকাতা পুলিশে ১৫২৩টি শূন্যপদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের আওতায় ২০১৩-য় বিভিন্ন স্তরের ৩৪৯৬টি শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। ২৫০ জন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগের মাধ্যমে কলকাতা পুলিশের মহিলা পুলিশ বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৩-১৪-য় তাঁদের প্রশিক্ষণও সমাপ্ত হয়েছে। নিউটাউনে সাবঅর্ডিনেট পুলিশ অফিসার / কনস্টেবলের থাকার জন্য ২০০টি এলআইজি ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়েছে।

•   শহরে রাতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সহ পথ দুর্ঘটনার মতো ঘটনার দিকে নজরদারি চালানোয় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সিনিয়র অফিসারদের তত্ত্বাবধানে শহরের ১৫০টিরও বেশি পয়েন্ট স্থির করে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর ফলে রাতের ট্রাফিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধি এবং রাতের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, শহরে রাতের পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হয়েছে। গত ৬ মাসে বর্তমান পরিকাঠামো থেকে অতিরিক্ত ২.৫ লক্ষ ম্যানআওয়ার রাতের পুলিশি নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

•   ট্রাফিক আইনের কড়া প্রয়োগ এবং রাতে পুলিশের কার্যকরী ভূমিকার কারণে শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। ২০১১-র সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশ জুরিসডিকশনের আওতায় অতিরিক্ত ১৩৫ বর্গ কি.মি এলাকা যুক্ত হওয়ার পরও ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমতির দিকে।

•   ভয়াবহ দুর্ঘটনা

•   ২০০৯ : ঘটনা (প্রকৃত এলাকা : ৩৯৯, সংযুক্ত এলাকা : --- , মোট : ৩৯৯), দুর্ঘটনার শিকার (প্রকৃত এলাকা : ৪১৭, সংযুক্ত এলাকা : --- , মোট : ৪১৭)

•   ২০১০ : ঘটনা (প্রকৃত এলাকা : ৩৪১, সংযুক্ত এলাকা : --- , মোট : ৩৪১), দুর্ঘটনার শিকার (প্রকৃত এলাকা : ৩৫৪, সংযুক্ত এলাকা : --- , মোট : ৩৫৪)

•   ২০১১ : ঘটনা (প্রকৃত এলাকা : ৩৫৮, সংযুক্ত এলাকা : ৩৮ , মোট : ৩৯৬), দুর্ঘটনার শিকার (প্রকৃত এলাকা : ৩৭৫, সংযুক্ত এলাকা : ৪৩ , মোট : ৪১৮)

•   ২০১২ : ঘটনা (প্রকৃত এলাকা : ৩৪০, সংযুক্ত এলাকা : ১৩১ , মোট : ৪৭১), দুর্ঘটনার শিকার (প্রকৃত এলাকা : ৩৬২, সংযুক্ত এলাকা : ১৩৬ , মোট : ৪৯৮)

•   ২০১৩ : ঘটনা (প্রকৃত এলাকা : ৩২০, সংযুক্ত এলাকা : ১০০ , মোট : ৪২০), দুর্ঘটনার শিকার (প্রকৃত এলাকা : ৩৩৩, সংযুক্ত এলাকা : ১০৪ , মোট : ৪৩৭)

•   ট্রাফিক বিভাগে কলার কুলার, অ্যাঙ্কলেট, ব্রেস, জুতো এবং জ্যাকেটের মতো পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী নিয়ে আসা হয়েছে। আইনলঙ্ঘনকারী ট্যাক্সি, অটোরিকশা, এবং ধীর গতি সম্পন্ন যানবাহনের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরনো মামলার নিস্পত্তির জন্য লোক আদালত স্থাপন করা হয়েছে। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।

•   অন্যান্য মেট্রোপলিটনের তুলনায় কলকাতায় খুন, ডাকাতি, রবারি এবং বার্গলারির ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কম। নিচে সেই চিত্রই উপস্থাপন করা হল :

•   খুন : কলকাতা – ৮৫, দিল্লি – ৪০৮, মুম্বই – ২১৫, চেন্নাই – ১৮০, বেঙ্গালুরু – ২৬৬

•   ডাকাতি : কলকাতা – ৮, দিল্লি – ২৩, মুম্বই – ২৯, চেন্নাই – ২, বেঙ্গালুরু - ৩৭

•   রবারি : কলকাতা – ৪৪, দিল্লি – ৫২২, মুম্বই – ১১৩১, চেন্নাই – ৮৫, বেঙ্গালুরু - ৬৭০

•   বার্গলারি : কলকাতা – ৯৬, দিল্লি – ১৪৮৩, মুম্বই – ২৫০০, চেন্নাই – ৫৪৬, বেঙ্গালুরু - ১২৪০

•   অন্যান্য মেট্রোপলিটনের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনাও কলকাতায় অনেকটাই কম। ২০১২-র ‘ক্রাইম অফ ইন্ডিয়া’ নথি থেকে প্রাপ্ত প্রামান্য তথ্য উপস্থাপন করা হল :

•   কলকাতা : ৬৮, দিল্লি : ৫৮৫, মুম্বই : ২৩২, চেন্নাই : ৯৪, বেঙ্গালুরু : ৯০

•   ২০১৪-র জানুয়ারিতে স্বাধীন বিশেষ জুভেনাইল পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। শিশুশ্রম আইন, বাল্যবিবাহ রোধ আইন এবং শিশুদের যৌন হেনস্থা রোধ আইন সহ বিভিন্ন আইনের প্রয়োগ যাতে যথাযথ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছে এই বিশেষ ইউনিট।‘ইনটেলিজেন্স সারভাইল্যান্স সিস্টেম’( আইএসএস)- এর আওতায় সারাক্ষণ নজরদারি চালানোর জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ক্রসিং গুলোয় ৫০০-রও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে। এছাড়াও আলিপুরে ‘স্মার্ট ভিডিও সারভাইল্যান্স সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। লেন এবং বাইলেনগুলোতে ‘ সিটি ওয়াচ’ প্রকল্পের আওতাধীন মোটরসাইকেল পেট্রোলিং চালু করা হয়েছে। পুলিশ স্টেশনও গুলিকে এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ১০০ টি মোটর সাইকেল দেওয়া হয়েছে।

•   ১০.১.২০১৪-য় রেড রোডে স্বামী বিবেকানন্দের ১৫০ তম জন্মবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিসের পক্ষ থেকে এমন অনন্য উদ্যোগ নজিরবিহীন।

•   শহরে গোলযোগ বা নাশকতা ঠেকাতে, দুর্যোগ মোকাবিলায়, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সন্দেহজনক যানবাহনের ওপর নজর রাখতে একটি ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল’( ইউএভি) স্থাপন করা হয়েছে।

•   হাওড়ার ডুমুরজলার কাছে কলকাতা পুলিশের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অ্যাকাডেমির জন্য এইচআইটি ৫৪.৫৫ একর জমি বরাদ্দ করেছে। ইতিমধ্যেই ২৫.৮৩ একর জমি কলকাতা পুলিসকে হস্তান্তরিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ আবাসন এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম লিমিটেড ৭.২ কোটি টাকা দিয়েছে।

•   ০৮.০৪.১৩ তারিখে লালবাজারে স্থাপিত হয়েছে এসটিএফ পুলিশ স্টেশন। কলকাতা পুলিশের এলাকায় সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ, মাদকদ্রব্য জনিত অপরাধ, আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি ইত্যাদি সংক্রান্ত ঘটনার তদন্ত করাই এসটিএফ-এর উদ্দেশ্য।

•   ২০১৩-র এপ্রিল থেকে এসটিএফ-এর সাফল্য

•   ১) বাইশ জন কালোবাজারিকে জাল নোট সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৫১,২১,৪০০ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মামলাগুলি বর্তমানে বিচারাধীন।

•   ২) মাওবাদী কার্যকলাপের (সিপিআই মাওবাদী) ৩টি মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি দেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং বেশ কিছু মাওবাদী প্রচার পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে।

•   ৩) ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন দলের এক সন্ত্রাসবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ১,৯০,০০০ জাল টাকা, বিস্ফোরক এবং তিনটি ডিটোনেটর উদ্ধার করা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

•   কলকাতা পুলিশের হেড কোয়ার্টার এবং ডিভিশনাল অফিস ও সব পুলিশ স্টেশনগুলিতে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

•   অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের আত্মরক্ষার কলাকৌশল শেখানোর জন্য ‘সুকন্যা’ নামে একটি প্রকল্প আনতে চলেছে কলকাতা পুলিশ।

•   ২০১৪-১৫-য় কলকাতা পুলিশ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ফোর্স( কেপিডিএমএফ), ট্যুরিস্ট পুলিশ ফোর্স এবং সিটি পুলিশ ভল্যান্টিয়ার ফোর্স গঠণ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কমিউনিটি পুলিস উইং খোলার পাশাপাশি ১৫৬ জন এস. আই, ১৬৯ জন সার্জেন্ট, ২১ জন মহিলা এস.আই, ২৬০০জন কনস্টেবল, ৩০৭ জন মহিলা কনস্টেবল এবং পুলিশ ড্রাইভারের শূন্যপদ পূরণের প্রস্তাব রেখেছে কলকাতা পুলিশ।

•   ২০১৪-১৫-য় কলকাতা পুলিশের প্রস্তাব : ১) আন্তরাজ্য অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় এবং গতিবিধির সমস্ত তথ্যের রেকর্ড রাখা ২) সাইবার ক্রাইম রুখতে প্রত্যেক আইএসপি-র জন্য সেন্ট্রাল ডাটা বেস প্রস্তুত করা ৩) নিরাপত্তা রক্ষী বিহীন এটিএম কাউন্টার, বড় হোটেল এবং গেস্ট হাউজ ইত্যাদির বাইরে মেগালেন্সযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ৪) ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইনস্টল করা ৫) স্পেশাল ব্র্যাঞ্চে ইনডেক্সিং সিস্টেমের ডিজিটালাইজেশন করা ৬) ট্রাফিক বিভাগের দ্বারা ধীর গতি সম্পন্ন যানবাহনের র্যা শনালাইজিং এবং স্ট্রিমলাইনিং করা ৭) ট্রাফিক বিভাগের দ্বারা রোড সেফটি অডিটের উদ্যোগ।

•   কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের পুলিশকর্মীদের জন্য ‘প্রত্যাশা’ নামের এক অনন্য আবাসন প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্যসরকার। এই প্রকল্পের জন্য বিনামূল্যে জমি দিচ্ছে রাজ্য। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০,০০০ ফ্ল্যাটের নির্মাণ সম্পূর্ণ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

•   পুলিশকর্মীদের সন্তানদের জন্য পিপিপি মডেলের আওতায় স্কুল স্থাপন করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

•   সাব-ইন্সপেক্টর এবং অধস্তন পুলিশকর্মীদের পরিবারের জন্য আবাসন, চিকিৎসা এবং অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য সার্ভিসে যোগ দেওয়ার ১৫ বছর পর যদি কোনও সাব-ইন্সপেক্টর এবং অধস্তন পুলিশকর্মী ইচ্ছা করেন তাহলে তাদের নিজের জেলায় অথবা বাড়ির নিকটবর্তী জেলায় পোস্টিং পেতে পারেন।

•   পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মচারি এবং তাঁদের পরিবারকে গ্রুপ মেডিকেল বীমা যোজনার আওতায় আনতে উদ্যোগী সরকার। ঐচ্ছিক নথিভুক্তকরণের মাধ্যমে এই বীমা যোজনাটি কাজ করে। এই বীমা যোজনাটি শুরু হয়েছিল ১৯,৭৩৫ জন সদস্যকে নিয়ে। বর্তমানে রয়েছে ৫৭,৭৭৮ জন সদস্য। এই বীমা যোজনায় ৫০,০০০ টাকা থেকে পলিসি বেড়ে ১,৫০,০০০ টাকা হতে পারে এবং ৫টি কঠিন ব্যাধির জন্য ২,০০,০০০ টাকা পাওয়া যেতে পারে। এই বীমা যোজনায় কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনা হলে ৬,০০,০০০ টাকা এবং পরিবারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের জন্য ৩,০০,০০০ টাকা পাওয়া যাবে।

•   ২০১৩-১৪-এ saarc-ভুক্ত নয়, এমন ৬০০ জন বিদেশীর এবং saarc-ভুক্ত ২১৫৮ জন বিদেশির ভিসা সম্প্রসারণ করেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিদেশিদের নাম নথিভুক্তকরণের অফিসটি।

•   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪৪টি ‘No Obligation to Return to India’ শংসাপত্র এবং ৪০ জন তিব্বতি উদ্বাস্তুর জন্য ‘No Obligation to Return to India’ শংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের নির্বাসন/ প্রত্যাবসনের ৫৬৯১টি মামলা ও অন্য দেশের নাগরিকদের নির্বাসন/ প্রত্যাবসনের ১৪টি মামলা আদালতের নির্দেশমত নাগরিকতা যাচাই করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

•   রাজ্যর মধ্যে সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (BADP) সার্থক ভাবে রূপায়িত হয়েছে। ৯টি জেলার ৬৫টি ব্লকে এবং ৪৪০০টি গ্রামে এই প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে রাস্তা উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য অতিরিক্ত শ্রেনীকক্ষ নির্মান, বন্যাত্রানকেন্দ্র গঠন, অচিরাচরিত শক্তির উৎস নির্মাণ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, নিকাশিব্যবস্থা নির্মাণ, কালভার্ট এবং সেতুগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা ইত্যাদি। কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দপ্তরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে BADP প্রকল্পের অধীনে একটি ‘Training on Skill development and Capacity Building’ প্রকল্প শুরু হয়েছে।